রহস্যে ঘেরা প্রশ্ন, রেঞ্জারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মধুপুরে টানা ৭ দিন ধরে নিখোঁজ বনকর্মী লাল চাঁন বাদশা

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
২ ডিসেম্বর, ২০২৫ এ ৩:১৮ এএম
মধুপুর জাতীয় উদ্যানের সদর রেঞ্জ অফিস—যেখান থেকে নিখোঁজ হন বনকর্মী লাল চাঁন বাদশা। ছবি: সংগৃহীত

মধুপুর জাতীয় উদ্যানের সদর রেঞ্জ অফিস—যেখান থেকে নিখোঁজ হন বনকর্মী লাল চাঁন বাদশা। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যানে বন রাজস্ব-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ লাল চাঁন বাদশা নামের এক আউটসোর্সিং বনকর্মীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র রহস্য। গত ২৬ নভেম্বর গভীর রাতে সদর রেঞ্জ অফিস এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন বন রাজস্বের ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, রশিদবইসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিও খুঁজে পাওয়া যায়নি—যা ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বন বিভাগের বিভিন্ন সূত্র ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়ায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছ,ে আর এতে সাধারণ মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন। লাল চাঁনের নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরপর দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হলেও সেসবেও দেখা যায় তথ্যবৈপরীত্য।

লাল চাঁন বাদশা মধুপুর উপজেলার বগাপাড়া গ্রামের তালেব আলীর ছেলে। পরিবারসহ তিনি জাতীয় উদ্যানের সদর রেঞ্জ কোয়াটারে বসবাস করতেন। পুলিশ ও বন বিভাগের তথ্যমতে, ২৬ নভেম্বর রাত প্রায় আড়াইটার দিকে তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হন। রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করেন—নিখোঁজ হওয়ার আগে লাল চাঁন একটি চিরকুট রেখে গেছেন। সেখানে লেখা ছিল, “রাতে অফিসে কাজ করলে দুইজন থাকা দরকার। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।” তবে পরিবারের অভিযোগ—চিরকুটটি লাল চাঁনের হাতে লেখা নয়। পাশাপাশি ওই রাতের অফিস এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও রহস্যজনকভাবে উধাও।

অন্যদিকে বন রাজস্বের হারানো সম্পদ নিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার বক্তব্যও পরিবর্তিত হতে দেখা গেছে। প্রথম জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন—৩১ লাখ টাকার ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডারসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পরদিন করা দ্বিতীয় জিডিতে তিনি জানান—এসব সম্পদ পরে উদ্ধার হয়েছে এবং ব্যাংকে জমাও দেওয়া হয়েছে। তার এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে স্থানীয়দের সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, “বন রেঞ্জে কোনো বড় অনিয়ম আড়াল করতে লাল চাঁনের নিখোঁজ ঘটনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।”

একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, “লাল চাঁনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সাজানোও হতে পারে। বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

এদিকে টাঙ্গাইল বন বিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মহসিন হোসেনের বিরুদ্ধে রেঞ্জ কর্মকর্তার প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ উঠলেও তিনি এসব অভিযোগ নাকচ করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) রাসেল আহমেদ বলেন, “লাল চাঁনের সন্ধানে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। তাকে পাওয়া গেলে পুরো ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।”

নিখোঁজের পাঁচ দিন পার হলেও লাল চাঁনের অবস্থান অজানা রয়ে গেছে। বন রাজস্বের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ঘিরে রহস্য, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এবং সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব—সব মিলিয়ে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মহল ও স্থানীয়রা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।