লবণাক্ত জমিতে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন, সম্ভাবনার দ্বার খুলছে রামপালে


ছবি : আজকের প্রথা
রামপালের সন্ন্যাসী গ্রামে অ্যাড. দিহিদার জাকির হোসেনের সৌখিন বাগানে এসেছে আশাজাগানিয়া ফলন
খেজুর বা খুরমা বলতেই মনে পড়ে সৌদি আরব কিংবা মরু অঞ্চলের কথা। মরুভূমিতেই এর চাষ হয়ে থাকে—এটাই ছিল প্রচলিত ধারণা। কিন্তু সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশে, তাও আবার উপকূলীয় লবণাক্ত মাটিতে সৌদি খেজুর চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাগেরহাটের রামপালের সৌখিন কৃষি উদ্যোক্তা অ্যাডভোকেট দিহিদার জাকির হোসেন।
রামপাল উপজেলার সন্ন্যাসী গ্রামে তার ১৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা খেজুর বাগানে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগানের ৮০টি গাছে ৬ থেকে ১০টি করে কাধিতে (থোকায়) বিভিন্ন রঙের খেজুর শোভা পাচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, লবণাক্ত মাটিতে সৌদি খেজুরের এমন সফল চাষ নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।
মরু ফলের দেশি অভিযাত্রা
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেনের বাগানে সারি সারি সৌদি আরবের খেজুর গাছ—আজোয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহী জাতের প্রায় সাড়ে ৪০০ খেজুর গাছ। গেল বছর অল্প কয়েকটি গাছে ফল আসলেও এবার ৮০টির বেশি গাছে বাম্পার ফলন দেখা গেছে।
উদ্যোক্তা জাকির হোসেন জানান, রামপালের লবণাক্ত মাটিতে কৃষিজ উৎপাদন বরাবরই দুর্বল। এক সময় ফলফলাদি চাষে ব্যর্থ হয়ে রাস্তার পাশে একটি দেশি খেজুর গাছে ফল দেখে তার মনে আসে সৌদি খেজুর চাষের কথা। ২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে চারা সংগ্রহ করে শুরু করেন এই যাত্রা।
তার মতে, যেখানে একমাত্র চিংড়ি ছাড়া তেমন কিছুই হয় না, সেখানে খেজুরের বাম্পার ফলন এই অঞ্চলের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা। বাণিজ্যিকভাবে বাগান সম্প্রসারণ করা গেলে বিদেশে রফতানির মাধ্যমে চিংড়ির মতো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। ইতিমধ্যে ২০ হাজার টাকা করে চারাও বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
শ্রমিকদের কথায় খুশির ছোঁয়া
বাগানে কর্মরত লাল মাহমুদ বলেন, “ছোটবেলা থেকে শুনতাম, মানুষ সৌদি আরব গিয়ে খেজুর বাগানে কাজ করে। ভাবতাম, কেমন সেই বাগান? এবার ঘরের কাছেই সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”
আরেক শ্রমিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, “নিজের হাতে গড়া এই বাগানে ফল দেখে মন ভরে যায়। প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ বাগান দেখতে আসে।”
স্থানীয় ও কৃষি বিভাগের মত
মল্লিকের বেড় ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার নাজমুল কবির ঝিলাম বলেন, “রমজান মাসে খেজুর ছাড়া ইফতার যেন অপূর্ণ। এবার রামপালে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন নিঃসন্দেহে এই অঞ্চলের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা।”
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “রামপালের অধিকাংশ এলাকায় অতিরিক্ত লবণের কারণে চিংড়ি ছাড়া তেমন কিছুই হয় না। কিন্তু অ্যাড. জাকির হোসেনের খেজুর বাগানে এবার যে ফলন হয়েছে, তা অভাবনীয়। এখন এই সফলতা জেলার অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “লবণাক্ত জমিতে খেজুরের চাষ হলে একদিকে যেমন পতিত জমির ব্যবহার হবে, অন্যদিকে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানির সুযোগও তৈরি হবে।”
আজকের প্রথা/ইতি